ঈশ্বরদীতে একদিন

প্রকাশঃ মার্চ ৪, ২০১৫ সময়ঃ ৪:০৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:০৫ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Lalon_Shah_Bridge,_Padma_River,_Bangladesh3কন্টিকারীর জঙ্গল আর তার ফুল। সে ফুলে একদল কালো প্রজাপতির লুটোপুটি। সে দৃশ্যে মুগ্ধ আমি ফটাফট ছবি তুলে রেললাইনের পাথর মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাই। সামনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। বিস্ময় নিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দেখি। তারপর এগিয়ে যাই আরও সামনে। ব্রিজের খুব কাছাকাছি যেতেই ট্রেনের কুউ ঝিকঝিক শুনি। রেলগাড়ির সে হুইসেল কানে আঘাত হানে। আমি ভয়ে পেছনে সরে যেতেই দেখি সামনে একেবারেই ফাঁকা, কোথায় ট্রেন! ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে সমানে হুইসেল বাজিয়ে দুই হাত নেড়ে আমাকে নেমে আসতে বলছেন একজন নিরাপত্তাকর্মী।

পাকশী আমার দেশের একটি অন্যতম ব্রডগেজ রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশন থেকে একটু উত্তরে গেলে রেলওয়ে অফিস আর মেরিনপাড়া রেলওয়ে কলোনি চোখে পড়বে। মেরিনপাড়ার মূল সৌন্দর্য রেলওয়ে কলোনির সুদৃশ্য ভবন আর এখানকার অফিস। কলোনির ভেতর পিচঢালা পথ আর বিশাল বিশাল সব রেইনট্রি দিয়ে শোভিত। এখানে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের পাশে রয়েছে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে রূপসা-বাগেরহাট সেকশনে চালু হওয়া প্রথম ন্যারোগেজ ট্রেন-ইঞ্জিনটি।

আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর আর ছিমছাম শহর ঈশ্বরদী। একসময় ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর ছিল। এলাকার লোকজন বিমানে ঢাকা-ঈশ্বরদী যাতায়াত করত। এখন যাতায়াতের প্রধান ভরসা বাস, তারপর রেলগাড়ি। ঈশ্বরদীতে দেখার আছে অনেক কিছু। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আর মেরিনপাড়ার কথা বলেছি। আরও দেখার আছে লালন শাহ সেতু, নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল ও সাড়াঘাট। এর ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অচল পড়ে আছে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলের পাম্পহাউস।

এখানে তালতলা মোড় থেকে একটু সামনে সাড়াঘাট যাওয়ার পথে পড়বে বটতলা মোড়, যা সিভিলহল্ট নামে পরিচিত। পাঁচ শহীদের মোড় আর শহীদপাড়ার গণকবরটি ইতিহাসের সাক্ষী। তা ছাড়া ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী হয়ে আছে রূপপুর বাজার। রূপপুর বাজার বললে এখন আর কেউ চেনে না। রূপপুর বাজার বিখ্যাত বিবিসি বাজার নামে।

ঈশ্বরদী জংশন সারা দেশে বিখ্যাত। তেমনই বিখ্যাত এখানকার খাবারের হোটেল তৃপ্তি। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তৃপ্তি হোটেলের ঝাঁপ কখনো বন্ধ হয়নি। দিন-রাত খোলা থাকে তৃপ্তি হোটেল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, হোটেলটির কোনো ফটক নেই। কিছুদিন আগেও ঈশ্বরদী স্টেশনে চা খাওয়ার কিছু প্রাচীন বিজ্ঞাপন ছিল। বিজ্ঞাপনের সেই প্লেটগুলো এখন শোভা পাচ্ছে রেলওয়ের চট্টগ্রাম জাদুঘরে। ঈশ্বরদীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে এখানকার বেনারসি পল্লি। ফতেহ মোহাম্মদ এলাকার বেনারসি পল্লিসহ পুরো ফতেহ মোহাম্মদ এলাকার ঘরে ঘরে রয়েছে বেনারসির তাঁত। বেনারসি সংস্কৃতি এবং প্রাচীন জনপদ হিসেবে অনবদ্য হয়ে আছে ঈশ্বরদীর আকাশ-বাতাস আর মানুষ।

জেনে নিন
ট্রেনে ঈশ্বরদী ভ্রমণ সবচেয়ে আরামদায়ক। তা ছাড়া ঢাকার গাবতলীর কাছের টেকনিক্যাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় শ্যামলী ও পাবনা এক্সপ্রেসের বাস ছেড়ে যায় ঈশ্বরদীর উদ্দেশে। জ্যামে না পড়লে পাঁচ ঘণ্টায় ঈশ্বরদী পৌঁছে যাবেন। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশেই রয়েছে আবাসিক হোটেল ফয়সাল, ঈশ্বরদী ও উত্তরা হোটেল। রাতযাপনের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। খাওয়ার জন্য তৃপ্তি ও আল-আমীন হোটেল ছাড়া গতি নেই। খরচ বেশি হলেও একটু দূরের পাকশী রিসোর্টে থাকতে পারেন। পাকশী রিসোর্ট খান মঞ্জিল রিসোর্ট নামেও পরিচিত। এখানে থাকা-খাওয়ার ভালো বন্দোবস্ত আছে। আছে একটি থিমপার্ক, সুইমিংপুলসহ হেরিটেজ জোন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পাকশীতে অফিসার্স রেস্টহাউস বা ভিআইপি রেস্টহাউসেও থাকা যেতে পারে। সূত্র:প্রথমআলো,
প্রতিক্ষণ/এডি/রানা।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G